• Categories

  • Archives

  • Join Bangladesh Army

    "Ever High Is My Head" Please click on the image

  • Join Bangladesh Navy

    "In War & Peace Invincible At Sea" Please click on the image

  • Join Bangladesh Air Force

    "The Sky of Bangladesh Will Be Kept Free" Please click on the image

  • Blog Stats

    • 327,568 hits
  • Get Email Updates

  • Like Our Facebook Page

  • Visitors Location

    Map
  • Hot Categories

ব্যারেন্ট সাগরের কান্না

লিখেছেনঃ _জু ন_

শুভরাত্রি প্রিয়তমা মারিয়া,

জান আমার, কেমন আছো বলোতো আমাকে ছেড়ে!! মনে হয় ভালোই আছো !! না না দুষ্টুমী করলাম তোমার সাথে। আমি জানি আমাকে ছেড়ে তুমি এক মুহুর্তও ভালো থাকতে পারো না।

তারপর কি খবর, সব ভালোতো? আগে বলো তো আমার দুচোখের দুটি তারা পাশা আর মাশা কেমন আছে? ওরা তো এখন ঘুমিয়ে গেছে তাই না!! তুমি বোলো অনেক মিস করি ওদের। কেমন করে যে আমার চোখের আড়ালে বড় হয়ে যাচ্ছে বুঝতেই পারছিনা । ওদের আমার অনেক আদর দিও। আর তোমার জন্য রইলো একটু খানি! কি রাগ করলে নাকি !! নাহ্‌ তোমার জন্যও অনে…ক অনেক আদর।
আমি জানি মারিয়া তুমি এখন আমার মতই আমার কথা ভাবছো বসে বসে। আমার সামরিক পোশাক পরা যে ছবিটা আমাদের বিছানার সাইড টেবিলে রাখা আছে ওটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো, তাই না ! মন খারাপ কোরো না, মহড়া শেষে আমি খুব শীঘ্রই তোমাদের কাছে ফিরে আসবো।

শোনো আমরা এখন আছি ব্যারেন্ট সাগরে, ঐ যে যার আগে নাম ছিল মুরমন্সক সাগর। রাশিয়ার উত্তরে আর্কেটিক সাগরের কাছে। আমাদের রাশিয়ান নৌবাহীনি নর্দান ফ্লিটের নৌ মহড়ায় যোগ দিতে এসেছি আমরা । না না চিন্তা কোরো না। ভয়ের কিছু নেই। এটা তো আর যুদ্ধ না। মনে রেখো তুমি একজন কমান্ডারের বৌ। তুমি হবে সাহসী।

https://i0.wp.com/russiatrek.org/images/photo/kursk-city-architecture.jpg

বর্তমান কুরস্ক শহর

http://02varvara.files.wordpress.com/2010/07/01-k141-kursk-03-e1280080740629.jpg?w=1000

সাবমেরিন কে - ১৪১ কুরস্ক এখন শুধুই অতীত

তাছাড়া আমাদের এই বিশাল অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ারে চালানো ক্রুজ মিসাইল সাবমেরিনের নামটিও কিন্ত ভারী সুন্দর। রাশিয়ার কুরস্ক শহর যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নৌ যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৪৩ সনে। সেই কুরস্ক শহরের নামে এই সাবমেরিন, \’কে – ১৪১ কুরস্ক\’। ন্যাটোর ভাষায় যার নাম অস্কার ২য়। একশ চুয়ান্ন মিটার লম্বা,আর চারতালা সমান উচু এই সাবমেরিনে চালানোর জন্য দুটো পারমানবিক চুল্লি, দুটো স্টিম টারবাইন আর সাত ব্লেডের দুটো টারবাইন আছে চিন্তা করতে পারো কি শক্তিশালী আমাদের \’কুরস্ক\’।

এত বড় সাবমেরিন এর আগে আর কখোনো তৈরী হয়নি । নিকেল, ক্রোম আর স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরী অত্যন্ত মজবুত এই সাবমেরিন মনে রেখো তোমার স্বামী চোখ বুজেই চালাতে পারে।

মারুশা প্রিয়া আমার, তোমার গর্বিত হওয়া উচিৎ যে তুমি পৃথিবী বিখ্যাত একজন নৌ সেনাপতি এবং অস্কার ক্লাস সাবমেরিন ‘কুরস্কের’ অধিনায়কের স্ত্রী।

তুমি হয়তো জানো সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের আগে স্নায়ু যুদ্ধের সময় ডিজাইন করা এই সাবমেরিনটি বিরানব্বই সালে তৈরী হয়ে চুরানব্বই সালের ডিসেম্বরে কমিশন পায়। অর্থাৎ রাশিয়ান নৌ বহরে যোগদান করে। তোমার মনে আছে কসোভো যুদ্ধের সময়ও আমি কুরস্কের অধিনায়ক হয়ে ভুমধ্যসাগরে আমেরিকান নৌ বাহীনির সিক্সথ ফ্লিটকে সাফল্যের সাথে অনুসরন করি। মনে রেখো প্রিয়তমা তোমার স্বামী একজন বিখ্যাত নৌ সেনাপতি।

এখন অনেক কাজ বাকি আছে । কাল মহড়া শুরু হবে ভোর থেকে । ঘুম তো আর হবেনা, তবে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো লক্ষীটি আর আমাকে নিয়ে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখো। কাল আবার লিখবো। তারপর ফিরে এসে একদিন তোমার হাতে হাতেই এ চিঠি পৌছে দেবো।

ইতি তোমারই পাভেল।

১১ই অগাস্ট ২০০০

মাগো,

কেমন আছো মা? আমি অনেক ভালো আছি।

আমার জন্য তুমি একটুও চিন্তা করবে না বলে দিলাম। আমি আর এখন তোমার ছোট্ট পেত্রুশা নই , অনেক বড় হয়েছি, আঠারো বছর বয়স আমার। এখন থেকে তোমার সব ভাবনা আমার উপর ছেড়ে দাও, অনেক ভেবেছো।

মা মনে আছে বাবা মারা গিয়েছে সেই কত বছর হলো। তুমি তো আমাকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিলে। একবারও তো নিজের দিকে চাইলে না। আমি ফিরে এসেই এবার তোমাকে মস্কো নিয়ে আসবো। তোমার আর একা একা গ্রামে থাকা লাগবেনা। আমি জানি তুমি তোমার ঐ প্রিয় বান্ধবী ইয়েলেনা খালাকে ছেড়ে আসতে চাইবেনা। তবে এবার এসে কিছুদিন ছুটি নিয়ে তোমার কাছে থাকবো ।

মা আমি এখন যে সাবমেরিনে আছি এটাতে থাকা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এত বড় সাবমেরিন আর নেই। আমরা মোট অফিসার আর জুনিয়ার ক্রু মিলে একশ আঠারো জন আছি। তাদের অনেকের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধু।অবসরে আমরা অনেক মজা করি।

খাওয়া দাওয়া নিয়ে তুমি একটুও চিন্তা কোরো না মা। এখানে অনেক ভালো ভালো খাবার আছে। তবে তাজা শাক সব্জী নেই আর সব্জীতো আমি পছন্দও করি না তুমি তো জানোই।

মা কাল সকালেই শুরু হবে আমাদের মহড়া। অনেক কাজ বাকী আছে। এরই ফাকে বসে তোমাকে লিখলাম। কমান্ডিং অফিসার দেখলে খুব রাগ হবে। ভীষন মনে পড়ছে তোমার কথা তাই লিখলাম।

ইতি তোমার আদরের পিওতর।

১১ই অগাস্ট ২০০০

নাস্তাশিয়া আমার আদরের নাস্তিয়া, প্রেয়সী আমার।

কেমন আছো বলোতো আমার লক্ষীটি ?

আমি জানিনা তোমার কেমন লাগছে কিন্ত তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে যা আমি লিখে বোঝাতে পারবো না। এবার ভালো করে তোমার সাথে দেখা করা বা কথা বলার ও সুযোগ পাইনি, এত ব্যাস্ত ছিলাম।

এবার এসেই কিন্ত তোমার বাবা মা র কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবো আর কোনো কথা নেই। অনেক দিন হয়েছে আমাদের পরিচয়, এবার স্থির হয়ে বসতে হবে দুজন বুঝেছো। এসব নিয়ে আমি অনেক ভাবি যখন কোনো কাজ থাকে না।

https://i0.wp.com/lh4.ggpht.com/_cTaLGgz4Ru8/RpMugPkUffI/AAAAAAAABS8/bs2hjgnFZDQ/Kuznetsov.jpg

রাশিয়ান নর্দান ফ্লিটের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ

আমার জন্য একটুও ভেবো না সোনা। কারন আমাদের যে কমান্ডার উনি সাবমেরিন চালানোর ব্যাপারে খুবই দক্ষ একজন অফিসার। তাছাড়া আমরা তো আর যুদ্ধ করছিনা। কাল আমাদের মহড়ায় আমরা শুধু দুটো ডামী টর্পেডো ছুড়ে মারবো আমাদের নর্দান ফ্লিটের কিরভ ক্লাস যুদ্ধ জাহাজ পিওতর ভেলিকির দিকে। সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কি না পরীক্ষা করে দেখার জন্য।

জানো নাস্তিয়া আমাদের সাবমেরিনে কিন্ত অনেক দ্রুতগতিতে চলতে পারে, পানির নীচে এর গতি প্রতি ঘন্টায় ৩২ নটস অর্থাৎ ৩৭ মাইল আর পানির উপর ১৬ নটস অর্থাৎ ১৮ মাইল। আর তিনশ থেকে পাঁচশ মিটার সমুদ্রের গভীরে নামতে পারে। ভাবতে পারো তুমি! এটা তে অংশগ্রহন করতে পেরে তোমার প্রিয়তম অনেক গর্বিত।

আজ এখানে শেষ করি। বোঝোই তো কাল থেকে মহড়া, কত রকম প্রস্ততি, কত্ত ঝামেলা, এরই মাঝে আর থাকতে না পেরে তোমাকে চিঠি লিখতে বসলাম । ভালো থেকো প্রিয়া আমার, অনেক আদর জেনো। কাল আবার সময় পেলে লিখবো।

ইতি তোমার প্রিয়তম ভাসিলি।

সুপ্রভাত মারুশকা প্রিয়া আমার,

‘অনেক অনেক আদর আর চুমু তোমার দুচোখের পাতায়। ঘুম ভেঙ্গেছি কি ! মনে হয়না, এখন তো ভোর ৫টা মাত্র। জানি সারারাত আমার কথা ভেবে ভেবে একটু আগেই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছো।

আর একটু পর থেকেই কিন্ত শুরু হবে আমাদের আসল কাজ, লক্ষীটি বুঝতে পারছো তো সবার দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে ?

আমার অফিসার আর জুনিয়র ক্রু রা ছাড়াও হেড কোয়ার্টার থেকেও আরো পাঁচজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ আমাদের সাথে নৌ মহড়ায় অংশগ্রহন করছে।

মারিয়া, তুমিতো ভালো করেই জানো সাফল্য সবার সাথে ভাগ করে নিতে হয়, কিন্ত ব্যর্থতার দায়িত্ব শুধু একা আমারই, কারণ আমি যে অধিনায়ক। প্রার্থনা কোরো যেনো তোমার স্বামী আজ সাফল্যের সাথে এই দায়িত্ব পালন করতে পারে।

কাজ শুরু করার আগেই কেন জানি তোমাকে বলতে ভীষন ইচ্ছে করলো, আমি অনেক মিস করছি তোমাকে, তোমার সান্নিধ্যকে …

সব কাজ শেষ করে আবার লিখবো কেমন …অনেক অনেক ভালো থেকো…

পাশা মাশা কে আমার আদর দিও’…

১১. ৫০ ১২ ই অগাস্ট ২০০০

‘নাস্তাশিয়া প্রিয়া আমার,

কি ভয়ংকর এক পরিস্থিতিতে বসে তোমাকে এই চিঠিটি লিখছি তা তুমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে কি না জানি না। কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে এটাই তোমার কাছে লেখা আমার শেষ চিঠি।

https://i0.wp.com/img256.imageshack.us/img256/2346/threerussianflagships02.jpg

রাশিয়ান নর্দান ফ্লিটের কিরভ ক্লাস যুদ্ধ জাহাজ পিওতর ভেলিকি

নাস্তিয়া তুমিতো জানোই আজ ভোর থেকে আমাদের নৌ মহড়া শুরু হয়েছে। এখানকার সময় ঠিক সকাল ১১টা ২৮ মিনিটে কমান্ডারের নির্দেশে আমাদের দায়িত্বরত অফিসার প্রথম টর্পেডোটা ছুড়ে মারলো যুদ্ধ জাহাজ ভেলিকির উদ্দেশ্যে।

কিন্ত বুঝতে পারলাম না কেন জানি সেটা লক্ষ্য বস্তুকে আঘাত না করে টিউবের মধ্যেই প্রচন্ডভাবে বিস্ফোরিত হয়ে আমাদের সাবমেরিনের প্রথম অংশটিকে উড়িয়ে নিয়ে গেল নাস্তু। আর সেই সাথে উড়িয়ে নিয়ে গেলো আমাদের সাতজন অফিসারকেও।

ধারনা করছি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড জালানী ব্যাবহার করা টর্পেডোটা তে সম্ভবত মরচে ধরে লিক হয়ে গ্যাস জমেছিল। না হলে তো এমন হবার কথা না!

এর পর মুহুর্তেই এসি আর কারেন্টের তার দিয়ে বিসাক্ত গ্যাস এসে পাশের চেম্বারের নেতৃত্বে থাকা ৩৬ জন সিনিয়র অফিসার কে অচেতন করে তোলে। এতে আমাদের জীবন বাচানোর জন্য যে জরুরি ঘন্টা বাজানোর দরকার ছিল তা আর বাজাতে পারেনি তারা। এগুলো কিন্ত খুব দ্রুত ঘটছিল নাস্তু ।

এর ২ মিনিট পরই নিয়ন্ত্রন হারিয়ে আমাদের সাবমেরিনটি সমুদ্রের বুকে সজোরে আছড়ে পরলো। তাতে সবগুলো টর্পেডো এক সাথে বিস্ফোরিত হয়ে ৩৩ ইন্চি পুরু ‘কুরস্কে’র গায়ে বিশাল এক গর্তের সৃষ্টি করলো।আর সেখান দিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে ব্যারেন্ট সাগরের হীম শীতল ৯০.০০০ লিটার পানি একবারে ঢুকে চার নং কম্পার্টমেন্ট পর্যন্ত ধ্বংস করে ফেল্লো।

আমাদের কমান্ডার এবং হেড কোয়ার্টারের ৫ জন সিনিয়র অফিসার সহ ঐ রুমগুলোয় যারা যারা ছিল তারা সবাই মুহুর্তের মধ্যেই মারা গেছে নাস্তিয়া।

তুমিতো জানো আমাদের এক একটা কম্পার্টমেন্ট আলাদা আলাদা এবং শক্ত ভাবে লাগানোর সিস্টেম আছে। যার জন্য ৬ থেকে ৯ নং কম্পার্টমেন্ট পর্যন্ত অক্ষত আছে আর আমরা মোট ২৩ জন এই ধাক্কা সামলে এখনো বেঁচে আছি।

জানো ভয়ংকর সেই বিস্ফোরনের সাথে সাথে আমাদের পারমানবিক চুল্লী দুটো অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেছে। আর সাথে সাথে নিভে গেছে বাতি আর বন্ধ হয়ে গেছে অক্সিজেন তৈরী আর সরবরাহের সব ব্যবস্থা।

জানিনা আমাদের ভাগ্যে কি আছে। তোমার সাথে ঘর বাঁধার আশা যেনো ক্রমশই আস্তে আস্তে সুদুরে মিলিয়ে যাচ্ছে নাস্তিয়া প্রিয়া আমার।

তুমি হয়তো ভাববে আমি কি করে এগুলো লিখছি ! এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমি হাতড়ে হাতড়ে অনেক কষ্টে অনুভব করে করে লিখে যাচ্ছি শুধু এটুকু আশায় যদি কখনো তোমার হাতে চিঠিটা পরে!

তুমি কি জানো নাস্তু দুর্ঘটনায় পড়লে তা জানানো আর জায়গাটি চেনানোর জন্য যে বয়া ছেড়ে দেয়ার নিয়ম, সেটাও এখন আর কাজ করছেনা। কি দুর্ভাগ্য আমাদের! সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে আমাদের বাঁচার আশা এখন শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ। পানির উপরে যারা আছে তারা মনে হয় বুঝতেই পারছেনা আমরা কি ভয়ংকর বিপদে পড়েছি। বিস্ফোরনের শব্দ শুনে হয়তো এটাই ভাববে ডেপথ চার্জ করছি।

নাস্তিয়া প্রেয়সী আমার আর লিখতে পারছিনা। প্রার্থনা করো তোমার ভাসিলি যেন তোমার কাছে জীবিত ফিরে আসে। আর যদি না আসি তবে এটুকু শুধু জেনে রেখো সে তোমাকে তার জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসতো’ ….

১১.৫৫ ১২ই অগাস্ট ২০০০

মাগো, লক্ষী মা আমার,

‘কেমন আছো মা, ভালোতো? কিন্ত মাগো তোমার পেত্রুশা যে ভালো নেই । সংক্ষেপে লিখছি এই চিঠি। জানিনা আর কখোনো তোমাকে চিঠি লিখা হবে কি না! মা আমাদের সাবমেরিন ভয়ংকর এক দুর্ঘটনায় পড়েছে। কিভাবে কি হয়েছে কিছুই জানি না।

এখন আমরা ১১৮ জনের মধ্যে বেঁচে আছি মাত্র ২৩ জন, বাকী সবাই মারা গেছে। । একবারে শেষ রুমটায় বাইরে থেকে সাহায্যের আশায় অন্ধকারে জরুরী দরজার কাছে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। একজন ক্যপ্টেন লেফটেনেন্ট আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কেউ বলছে আমরা দরজা খুলে এক জন এক জন করে ঐ পথ দিয়ে বের হয়ে হীম শীতল সাগরের বুকে ভেসে উঠি। মাত্রই তো ১০০ মিটার নীচে। কিন্ত বলোতো ঐ ঠান্ডা পানিতে তৎক্ষনাৎ সাহায্য না পেলে আমরা কি বেঁচে থাকবো! কেউ সাহস করছেনা এই রিস্ক নিতে। নিশ্চয় কেউ না কেউ আসবেই সাহায্য করতে কি বলো ! তাছাড়া দরজাটা খোলা যাবে কি না তাও বোঝা যাচ্ছেনা!

বেশ অনেক্ষন হলো অপেক্ষা করছি, বাতাসেও অক্সিজেন কমে আসছে। পাশের রুম থেকে চুইয়ে পড়া পানি এসে কোমর পর্যন্ত হয়ে গেছে।

মা এখনও পর্যন্ত তো বাইরে থেকে কেউ এসে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে না! নাকি হয়তো কেউ জানেই না আমাদের এই বিপদের কথা! কিছুই বুঝতে পারছিনা।

বিশেষ এক রকম কার্টিজ জ্বালিয়ে অক্সিজেন তৈরী করছি, কিন্ত এ ভাবে আর কতক্ষন, দুই ঘন্টার মত হয়ে গেলো। ভয়, হতাশা আর আতংকে সারা শরীর জমে আসছে, তারপরও লিখে যাচ্ছি। কে জানে এই হয়তো তোমার কাছে লেখা তোমার আদরের পেত্রুশার শেষ চিঠি।

মাগো তোমার মনে আছে শীতের সময় যখন চারিদিক বরফে ঢেকে যেত তখন আমি গরম চুল্লির তাক থেকে নামতেই চাইতাম না। তুমি কত কষ্ট করে বাইরে থেকে পানি আনতে, দোকানে যেতে।

মা বেঁচে আসলে তোমাকে আর কখনো কিচ্ছু করতে দেবো না। তোমার পেত্রুশা তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছে, অনেক কষ্ট দিয়েছে। আর যদি বেঁচে না ফিরি তাকে ক্ষমা করে দিও মা।

একি একজনের হাত থেকে অক্সিজেন তৈরীর কার্টিজ পরে গিয়ে পানিতে আগুন জ্বলে উঠলো ! সেই আগুন তো পানির উপরে থাকা সব অক্সিজেন শুষে নিচ্ছে। কি হবে এখন! দম বন্ধ হয়ে আসছে সবার।

নিকষ কালো কবরের মত অন্ধকারে সবার কান্নাকাটি আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসছে। মাগো আমার ভয়ার্ত, ফ্যাকাশে, ঠান্ডা মুখটায় এমন গরম লাগছে কেন ? এটা কি তোমার উষ্ণ হাতের ছোঁয়া ! ভারি ভালোলাগছে এই উষ্ণতা ! কোথা থেকে আসলো বলোতো’…

শেষ হয়ে আসা অক্সিজেন থেকে গভীর এক শ্বাস টেনে পাগলের মত তাড়াতাড়ি পেত্রুশা গালে হাত বুলিয়ে দেখে, নাহ্‌ মায়ের হাত নয়, এটা তারই চোখ থেকে বের হয়ে আসা অসহায় নোনা গরম জলের ধারা গাল বেয়ে ফোটায় ফোটায় গড়িয়ে পড়ে মিশে যাচ্ছে কুরস্কের খোলে জমতে থাকা ব্যারন্ট সাগরের ঠান্ডা নোনা পানিতে …

ব্যারেন্ট সাগরের একশ মিটার নীচে সেই হতভাগ্য সাবমেরিন ‘কুরস্ক’ দুর্ঘটনা সাড়া পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও সেই আবেদন পৌছেনি সে দেশের রাস্ট্রপতির কানে। কারণ তিনি তো তখন কৃ্ষ্ণ সাগরের তীরে অবকাশ যাপন কেন্দ্রে শার্টের হাতা গুটিয়ে বারবিকিউ তৈরীতে ব্যস্ত ।

এই ঘটনার পরপরই বৃটেন এবং নরওয়ে সাহায্য করতে চাইলেও সামরিক গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে উনি তা গ্রহন করতে রাজী হন নি। মানুষের জীবনের চেয়েও যা ছিল তাঁর কাছে অনেক বেশী গুরুত্বপুর্ন।

সেই হতভাগ্য ১১৮ জন নাবিকের মা বাবা স্ত্রী সন্তানের আহাজারি, কান্নাকাটি ও তাকে পাঁচ দিনের আগে টেনে আনতে পারেনি রাজধানীতে, দেওয়াতে পারেনি কোন বিবৃতি, বিদেশী সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি কারো করুন আর্তনাদ বা আকুতি।

https://i0.wp.com/www.aerospaceweb.org/question/weapons/submarine/kursk-wreck.jpg

কুরস্কের ধ্বংসাবশেষ

দীর্ঘ এক বছর পর একটি ডাচ কোম্পানী ‘কুরস্ক’ কে ব্যারেন্ট সমুদ্রের তল থেকে উদ্ধার করে। ডুবুরীরা জরুরী দরজা খুলে দেখতে পায় সেই নয় নম্বর কম্পার্টমেন্টের দরজার কাছে আর অর্ধ ডুবন্ত রুমের পানির মধ্যে ভেসে থাকা ২৩ জন হতভাগ্য নাবিকের মৃতদেহ যারা হয়তো উদ্ধারের আশায় সেখানে জড়ো হয়েছিল।

https://i0.wp.com/a3.sphotos.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-ash4/382705_252834344779849_144708565592428_689888_1747134688_n.jpg

একজন ক্যপ্টেন লেফটেনেন্টের গায়ে লেগে থাকা একটি ভেজা চিরকুট পাওয়া গিয়ে ছিল যাতে লেখা ছিল,

‘অন্ধকারে অনুভব করে করে লিখছি, যদি কারো হাতে পরে সে আশায়। আমাদের বেচে থাকার আশা শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ, যারা যারা এখনও বেচে আছে তাদের নাম লিখে রাখছি’।

জানিনা তবে কেন জানি আমার মনে হয় আজও সেখানে মাছ ধরা জেলেদের কানে সমুদ্রের বাতাসের সাথে ফিসফিসিয়ে মিশে আসে বিদ্ধস্ত ‘কুরস্কে’ আটকে পড়া ২৩ জন অসহায় হতাশ নাবিকের করুন চাপা কান্না আর শেষ দীর্ঘশ্বাস।

লেখা সমস্ত চিঠিগুলোই আমার কল্পিত, মনে হয়েছিল তারা যদি কেউ লিখতো তবে এমনটি লিখতো হয়তো।

পরবর্তীতে ‘কুরস্ক’ দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা যে বিশ্লেষন করেছেন চিঠির মধ্যে উল্লেখ করা টেকনিকাল বিষয়গুলো সেগুলো উপর ভিত্তি করেই লেখা।

মুলসূত্রঃ

https://i0.wp.com/www.choturmatrik.com/themes/analytic/images/banner/megh-novl-Hemanto.jpg

Leave a comment