সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ। সমাজের যে কোন অন্যায় কর্মকান্ড সাংবাদিকরা তুলে আনেন নিখুতভাবে। সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভও বলা হয়। সমাজ পরিবর্তনে সংবাদপত্রের ভূমিকাও অনবদ্য।
কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে কিছু কিছু সংবাদপত্র মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তারা কখনো কখনো প্রকৃত সংবাদকে উল্টা করে উপস্থাপন করে। আবার কখনো কখনো সত্যর সাথে আংশিক মিথ্যা লাগিয়ে পরিবেশন করে। আবার কখনো কখনো সত্য সংবাদটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যার মাধ্যমে তারা তাদের মতাদর্শগত ফায়দা লুটে এবং সমাজের বিশাল অংশের কাছে ভুল ম্যাসেজ প্রদান করে। এর পরিণতি ভাল হয় না। সমাজে ভুল বোঝাবুঝি তৈরী হয়। কিছু মানুষ এদের চাতুরতা ধরতে পারলেও তারা কিন্তু আম জনতাকে সত্য খবর পৌছে দিতে পারে না। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়।
যাই হোক, কোন সংবাদকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করাকে আমরা হলুদ সাংবাদিকতা বলি। আমি ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি পোস্টে আমাদের দেশের পত্রিকাগুলোর হলুদ সাংবাদিকতার কিছু নমুনা পেশ করব।
আজকে একটি বিষয় শেয়ার করছি
প্রথমে এই খবরটি পড়ুন:
এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে পাঁচ হাজার ৮৩৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০১১ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ওখানে আরো জানানো হয় যে, ৫৮৩৯ টি নারী নির্যাতনের মধ্যে ৫৪ টি ফতোয়ার ঘটনাও ছিল।
এই সংবাদটি সংবাদপত্রে স্বাভাবিকভাবে এভাবে শিরোনাম হতে পারে-
‘সারাদেশে গত দশ মাসে ৫৮৩৯ টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা’
অথবা
‘দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক’
অথবা
‘বেড়েই চলছে নারী নির্যাতন: সারাদেশে গত দশ মাসে ৫৮৩৯ টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে’
কিন্তু দেখুন প্রথম আলো সংবাদটিকে কিভাবে কভার করেছে! তারা আসল খবরকে পাশ কাটিয়ে ঐ সংবাদের ক্ষুদ্র একটি অংশকে শিরোনাম করেছে এভাবে:
মহিলা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন, ১০ মাসে ৫৪টি ফতোয়া
এরপর প্রথম আলো ফতোয়া নিয়েই পুরো রিপোর্টটিই তুলে ধরে। ৫৮৩৯ টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মধ্যে ৫৪টি ফতোয়ার ঘটনা অতি সামান্য। প্রথম আলো ৫৭৮৫ ঘটনা তাদের কাছে বড় নয়, বড় হচ্ছে- ৫৪!!!
এখন দেখুন কালের কন্ঠ কিভাবে রিপোর্টটি করেছে। তাদের শিরোনাম দেখুন
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য, ১০ মাসে ৫৮৩৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা
কালের কন্ঠে ফতোয়ার ঐ ৫৪টি ঘটনার কোন কথাই উল্লেখ করা হয়নি।
কোন পাঠক যদি প্রথম আলোর রিপোর্টটি পড়ে তাহলে তিনি অবশ্যই বিভ্রান্ত হবেন। তিনি ফতোয়াবাজির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হবেন। এবং আলেম ওলামাদের উপর ক্ষিপ্ত হবেন। কেননা ফতোয়াবাজি আসলে গ্রামের অশিক্ষিত মোড়লরা করলেও ঘটনাগুলিকে একদল বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক বন্ধুরা আলেমদের কাজ বলে তাদের বিরুদ্ধে ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন।
এভাবেই চলে হলুদ সাংবাদিকতা। সমাজ বদলে যায়। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা ওদের খপ্পরে পড়ে নিজেদেরকে বদলে ফেলে………………..
এক সময় একে অপরকে দেখলে ওরা সালাম দিত। এখন ওরা সালাম দেয় না; হাই, বাই, টাটা শব্দগুলো এখন সালামের জায়গা দখল করেছে।
আগে ছোটরা বড়দের সমীহ করত। বাসে কোন বৃদ্ধ ওঠলে ছোটরা জায়গা করে দিত। এখন ওরা নিজেদের অধিকার বোঝে। বুড়াদের পছন্দ করে না। তাদের জায়গা এখন বৃদ্ধাশ্রম!!!!!
আগের ছেলে মেয়েরা ইসলাম না মানলেও ইসলামের প্রতি তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা ছিল প্রবল। এখন ওরা ইসলামের নামও শুনতে পারে না। ইসলামের বিধি-বিধানকে ওরা ভাবে বর্বর আইন।
আগেরকার ছেলে মেয়েরা প্রেম-ভালবাসা বলতে কিছু বুঝত না। এখন ওরা লিভ টুগেদার বোঝে। বিয়ের আগে ‘ইয়ে নাকি বিয়ের পরে ইয়ে’ এ নিয়ে এখন টক শো হয়। পত্রিকায় পাতায় বিতর্কের ঝড় ওঠে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন ওরা যুবক-যুবতীরা কোলাকুলি করে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়। এটাই ওদের কাছে প্রগতীশীলতা। যারা এগুলো করে না তারা পিছিয়ে পড়া মানুষ, সেকেলে।
নারীরা পর্দা করবে কেন? পর্দা যে প্রগতীর অন্তরায়!!!
ইসলামের খাটি অনুসারীরা মিছিল করলেই সেটি জঙ্গি মিছিল হয়। অস্ত্র হাতে দামাল ছেলে রাস্তাঘাটে খুন খারাবি আর মাস্তানী করলে সেটা জঙ্গিপনা হয় না।
নারীরা এখন অনেক স্বাধীন। ওরা মডেলিং করে। নাটক করে ছি:নেমা করে। আদৃতার মত হারিয়ে গেলেও ওদের কিছু হয় না। ওদের কাছে পবিত্রতা আর স্বতিত্বের এখন কোন মূল্য নেই। যে কোন মূল্যে এগিয়ে যেতে হবে।
যিনা ব্যাভিচার, পতিতাবৃত্তি এখন কোন অন্যায় নয়। ওরা এখন আন্দোলন করছে পতিতাবৃত্তির স্বীকৃতি ও অধিকার আদায়ের!!!
প্রিয় বন্ধুরা!
চোখ কান খোলা রাখুন। সত্যের পথে থাকুন। সত্য জানার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুনঃ
- নীতিহীন সংবাদপত্রঃ দেশ জাতি রাষ্ট্রের স্বার্থ উপেক্ষিত যেখানে(এ লেখাটিও আপনাদের উপকারে আসতে পারে)
- দেশ ও ইসলাম বিরোধী প্রচারণায় বাংলাদেশী সিনেমা ‘ব্ল্যাক’ (এটি একটি সিনেমার কাহিনী, পড়ে দেখুন মানুষকে কিভাবে বিভ্রান্ত করা হয়)
সূত্রঃ
Filed under: Bangladesh, Featured, Islam At Stake | Tagged: Bengali language, Islam in danger, Newspaper, Prothom Alo, Yellow Journalism |
This was mentioned by prophet Muhammad as the sign of final hour.
You are right brother ….. We should work hard against the Jalim …..